top of page
Pink Paper
  • Writer's pictureAnirban Das

পুরাণ ও ইতিহাসে গণেশ

গণেশ কে? তাঁর অরিজিন কী?

হিন্দুদের দেবতাদের মধ্যে সবচেয়ে ব্যতিক্রমী বোধহয় গণেশ। না, শুধু তাঁর রূপের জন্য নয়; তিনি স্পেশাল, কারণ সব পুজো শুরু হয়, তাঁকে স্মরণ করার মধ্যে দিয়েই। মধ্যযুগের বাংলা মঙ্গলকাব্যগুলোও দেখবেন শুরু হয়েছে গণেশ বন্দনা দিয়েই। অথচ বলা হয় গণেশ নাকি প্রাচীন দেবতা নন। গণেশের রূপ যেমন অভিনব, তাঁর নিরিখে অভিনব তাঁর বাহনটিও। কে এই গণেশ, কীভাবে তিনি এলেন, কীভাবে এতো জনপ্রিয় হয়ে উঠল গণেশ বন্দনা - আজকের পর্ব গণেশ ঠাকুরের সেইসব পুরাণ ইতিহাসের গল্প নিয়েই।    


পৌরাণিক কাহিনিতে গণেশ

গণেশ, বিঘ্নবিনাশক, জ্ঞান-বুদ্ধি, সম্পদ-সমৃদ্ধির দেবতা। গণেশ কীভাবে এলেন, কেন তাঁর এই রূপ, -এই সংক্রান্ত পৌরাণিক কাহিনীটা জানেন তো? দেবী পার্বতী তাঁর দেহের ময়লা থেকে এক শিশুর মূর্তি নির্মাণ করেন। যা দেখে জেগে ওঠে তাঁর বাৎসল্যের ভাব। তিনি সেই মূর্তিতে প্রাণসৃজন করলে জন্ম হয় গণেশের। গণেশকে তিনি তাঁর প্রাসাদের দরজায় পাহারায় রাখেন। এদিকে শিব তো গণেশের কথা জানেন না, গণেশও দেবাদিদেবকে চেনেন না। তাই শিব যখন তাঁর প্রাসাদে প্রবেশ করতে যান, গণেশের কাছ থেকে বাধা পান। কর্তব্যনিষ্ঠ গণেশ শিবের শত বোঝানোতেও তাঁকে ঢুকতে দিতে রাজি না হলে, শিব ক্রুদ্ধ হয়ে গণেশের মুণ্ডচ্ছেদ করেন। তারপর পার্বতীর কাছে সবটা শোনার পর, নিরুপায় শিব একটি হাতির মাথার সাহায্যে গণেশকে পুনরুজ্জীবিত করে তোলেন। এতো গেল রূপের প্রসঙ্গ। আর কেন গণেশ সবার আগে পুজো পান, তা নিয়েও একটা পৌরাণিক কাহিনি রয়েছে। একবার এরকম একটা প্রতিযোগিতা হয়েছিল দেবতাদের মধ্যে যে, যিনি সবার আগে ব্রহ্মাণ্ড পরিভ্রমণ করে আসতে পারবেন, তিনিই দেবতাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলে পরিগণিত হবেন। তো সেখানে ইঁদুর বাহন গণেশ পিছিয়ে পড়েও, বুদ্ধি করে পিতা-মাতাকে পরিভ্রমণ করেন, কারণ পিতা-মাতাই তো বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সারাৎসার! তাই সেই প্রতিযোগিতায় জিতে গণেশ দেবতাদের মধ্যে সর্বাগ্রে পুজো পাওয়ার পুরস্কার পান! ...কিন্তু এতো গেল পৌরাণিক গল্প! ইতিহাসে আমরা গণেশকে কবে-কোথায়-কীভাবে খুঁজে পাবো? -একটু তলিয়ে দেখবেন নাকি?


গণেশের প্রাচীন নিদর্শন

আমাদের কাছে বৈদিক যুগের প্রাচীনতম গ্রন্থ বলতে ঋগ্বেদ। যেখানে ইন্দ্র সুপ্রিম গড। সেখানে ইন্দ্রের পাশাপাশি অন্যান্য দেবতারা থাকলেও গণেশ নেই। কোনো প্রাচীন বৈদিক গ্রন্থেই গণেশের কোনও উল্লেখ নেই। গণেশের উল্লেখ নেই প্রাচীন সংস্কৃত মহাকাব্য রামায়ণ ও মহাভারতেও। ‘এই দাঁড়ান, কী বললেন, মহাভারতে? বলি মাথাটা এক্কেবারে গেছে নাকি! ব্যাসদেব মহাভারত বলেছেন আর লিখেছেন যে স্বয়ং গণেশ! বললেই হলো মহাভারতে গণেশ নেই!’ নেই। মূল মহাভারতে গণেশ নেই। গণেশের মহাভারত লেখার কাহিনিটা যুক্ত হয়েছে পৌরাণিক কাল থেকে, আরও বিশেষভাবে বলতে গেলে, ‘স্কন্দ পুরাণ’, ‘ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ’, ‘গণেশ পুরাণ’, ‘শিব পুরাণে’র বদান্যতায়, মোটামুটি হাজার-দেড় হাজার বছর আগে থেকে। তবে তার আগে কি গণেশ ছিলেন না?


ইতিহাসে, প্রত্নসামগ্রীতে আমরা গণেশকে পাচ্ছি গুপ্ত যুগের মোটামুটি শুরু থেকেই, সময়ের হিসেবে ৪র্থ থেকে ৬ষ্ঠ শতাব্দী। এই সময় থেকেই গণেশের প্রতিকৃতি ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং বিভিন্ন মন্দিরের স্থাপত্য, মূর্তি এবং প্রত্নতাত্ত্বিক খননে গণেশের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। গণেশের প্রতিকৃতি ধীরে ধীরে ভারতীয় স্থাপত্য ও শিল্পকলার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠে। খাজুরাহো এবং এলোরার মন্দিরগুলিতে গণেশের বিশিষ্ট স্থান রয়েছে। এছাড়াও, কনৌজ এবং মথুরায় পাওয়া প্রাচীন মূর্তিগুলিতে গণেশের বিভিন্ন রূপ দেখা যায়। এই সব ক্ষেত্রগুলো পর্যবেক্ষণ করলে আমরা বলতে পারি যে মোটামুটিভাবে খ্রিস্টীয় ৫ম শতাব্দী থেকেই গণেশের উপাসনা ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।


গণেশ কি প্রাচীন দেবতা নন?

তবে এর নিরিখে যদি এই সিদ্ধান্তে আসা হয়, যে গণেশ ৫ শতাব্দীর আগে ছিলেন না, এই সময়েই তাঁর উঠে আসা, সেটা ভুল হবে। গণেশের উপাসনার মূল শিকড় রয়েছে অনার্য দ্রাবিড় সংস্কৃতির গভীরে। এই যে তাঁর হাতির মাথা এবং ইঁদুরের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক, এগুলোর মানে কী??


আপনি যদি আমাদের প্রাচীন জনসমাজ দেখেন, সেখানে বিভিন্ন টোটেম ছিল। দুর্গার হাতে এই যে মহিষাসুর বধ, সেই মহিষও কিন্তু একটা জাতিগোষ্ঠীর টোটেম। তেমনই হাতিও ছিল। আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে হাতির অস্তিত্বের প্রাচীন প্রমাণ মিলেছে শিবালিক পর্বতমালা অঞ্চলে ২৬ লক্ষ বছর আগে। তবে সাম্প্রতিককালে দেরাদুনের নিকটবর্তী অঞ্চল থেকে স্টেগোডন নামক বিলুপ্ত প্রজাতির হাতির ফসিল পাওয়া গেছে। যার বয়স ৫০ লক্ষ বছর। অর্থাৎ হাতি আমাদের অনেক আগে থেকেই এদেশে রয়েছে। ভারতের মধ্যে দক্ষিণভারত, মধ্যভারত, উত্তরভারত ও উত্তরপূর্ব ভারতের সর্বত্রই হাতির উপস্থিতি ছিল। একারণেই মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক থেকে অসম, বঙ্গদেশ, ছত্তিসগড় -এই সব অঞ্চলে হাতি জুড়ে গিয়েছিল কৃষিভিত্তিক সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে। ওডিশা, বাংলা, এবং মধ্য ভারতের বিভিন্ন উপজাতি সমাজে এখনও হাতি বৃষ্টি, উর্বরতা, এবং কৃষি সমৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই আজও গণেশের পূজাচার, গণেশের মোদক তৈরির সামগ্রী, বর্ষার পর তাঁর পুজোর মুহূর্ত -এগুলোর সঙ্গে কৃষিজীবী সমাজের নানা অনুষঙ্গ জড়িয়ে আছে। পাশাপাশি হাতির কথা বলতে গেলে, হাতি যেমন জঙ্গল পরিষ্কার করে, তেমনই তার অতুলনীয় শক্তি, স্থৈর্য, বুদ্ধি সমীহ করার মতো। সেই থেকেই হাতির টোটেম, হাতির পুজো এবং তারপর আর্যীকরণ হয়ে, হাতির মাথা যুক্ত মানুষের অবয়বে দেবতা গণেশের আত্মপ্রকাশ। তবে মনসা, চণ্ডীর আর্যীকরণের সঙ্গে শিব-গণেশের ফারাক হচ্ছে, যেহেতু লিঙ্গ উপাসনা ও হস্তি-উপাসনা একটা বিস্তীর্ণ ক্ষেত্রে হতো, শুধু পূর্বভারতে নয়, তাই এই ট্রাইবাল টোটেম থেকে গণেশে রূপান্তরটা অনেক আগে ঘটেছে। আর এই টোটেমের সম্প্রদায়টি ব্যাপক ও প্রভাবশালী ছিল বলেই হয়তো, গণেশের আর্যীকরণের পর আর্যসমাজ এই ট্রাইবাল দেবতাকে একেবারে ভিভিআইপি ট্রিটমেন্ট দিতে বাধ্য হয়েছে। লক্ষ করলে দেখবেন বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মেও হাতির পূজা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বৌদ্ধ ধর্মে, হাতি মানসিক শক্তি এবং প্রজ্ঞার প্রতীক। বুদ্ধের জন্মের পূর্বেই তাঁর মা মায়াদেবী একটি সাদা হাতি স্বপ্নে দেখেন, যা বুদ্ধের জন্মের আগাম সংকেত হিসেবে গণ্য হয়। জৈন ধর্মেও, হাতি শান্তি এবং সমৃদ্ধির প্রতীক। জৈন মন্দিরের প্রবেশদ্বারে হাতির মূর্তি প্রায়ই দেখা যায়, যা মন্দিরের পবিত্রতার রক্ষক হিসেবে বিবেচিত হয়। কেন? আমাদের সংস্কৃতিতে হাতির গুরুত্বের জন্যই।


আবার দেখুন গণেশের বাহন যে ইঁদুর, সেও কিন্তু টোটেম হিসেবে বিভিন্ন উপজাতিদের দ্বারা পূজিত হতো। হাতি যেমন শক্তি, প্রজ্ঞা এবং উর্বরতার প্রতীক, ইঁদুরও তেমনই প্রজনন এবং প্রাচুর্যের প্রতীক। ইঁদুর দেখবেন খুব দ্রুত বংশ বৃদ্ধি করে, এবং সে ফসলের ক্ষতি করলেও, চাষবাসের কাজে অনেক উপকারও করে। তাই আদিম কৃষিভিত্তিক সভ্যতায় ইঁদুরের গুরুত্ব ছিল। আর হাতি আর ইঁদুরের পুরো বিপরীত একটা ব্যাপার, তাদের মধ্যে মিলটা কিন্তু দুজনেই কৃষকবন্ধু, দুজনে এখানে পরিপূরক, এবং বৈপরীত্যের সহাবস্থানের খুব সুন্দর একটা রূপক। বিরাট গণেশের বাহন কে, না ক্ষুদ্র-তুচ্ছ ইঁদুর। এই রূপকই বোধয় বিশাল-ক্ষুদ্রের, বিরাট-তুচ্ছের আমাদের গতেবাঁধা ধারণা গুলো ভাঙতে বলে। এই যে গণেশকে নিয়ে আজ এই সমাজতত্ত্বের দৃষ্টিকোণ থেকে ভিডিয়োটা করলাম, গালমন্দ অনেকেই করবেন, অথচ এই বিষয়গুলো নিয়ে ভাববেন কজন বলুন তো!


কীভাবে গণেশ পুজো এত বড়ো উৎসব হয়ে উঠছে:

যে বিষয়টা দিয়ে আজ শেষ করবো, গণেশ পুজো এতো বড়ো উৎসব হয়ে উঠল কীভাবে, আর বাংলায় গণেশ বন্দনার চল কীভাবে হলো! গণেশ চতুর্থী পালনের ঘটা সবচেয়ে বেশি দেখা যায় দক্ষিণভারতে। যা বিশেষভাবে পালিত হয় মহারাষ্ট্রে। মহারাষ্ট্রের পেশওয়ারা গণেশের খুব ভক্ত ছিলেন, সেখান থেকেই মহারাষ্ট্রে গণেশ চতুর্থীর প্রচলন। তবে আধুনিককালে একে জনপ্রিয় করে তোলেন বাল গঙ্গাধর তিলক। ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের ঐক্যবদ্ধ করার জন্য তিলক ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে গণপতি উৎসব শুরু করেন গণেশ চতুর্থীর দিন। ধর্মকে সেদিন ভেদাভেদ নয়, ঐক্যপ্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষায় ব্যবহার করার চেষ্টা হয়েছিল। তারপর থেকেই দক্ষিণ ভারত জুড়ে গণপতি উৎসব একটা ব্যাপক আকার ধারণ করে।


বাংলায় গণেশ পুজোর চল হলো কীভাবে :

আগেই বলেছি উত্তরপূর্ব ভারতে হাতি পূজিত হয়ে আসছে হাজার হাজার বছর ধরে। আর গুপ্ত যুগে যে হাতি-উপাসনা রূপ পাচ্ছে গণেশ বন্দনায়। এই গুপ্তযুগ থেকেই বাংলা সর্বভারতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে, তার গুরুত্ব বাড়ছে, বাংলার নগর-বন্দরে সারা ভারতের বণিকদের যাওয়া-আসা শুরু হচ্ছে, সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান ঘটছে। তখন বাংলার নিজস্ব আদিম দেবদেবীরা একটু সিঁটিয়ে যাচ্ছেন। তাদের জায়গা নিচ্ছেন ব্রাহ্মণ্যবাদী সমাজের প্রধান উপাস্য দেবতারা। শুধু শিব-গণেশের ক্ষেত্রে তেমনটা ঘটছে না কারণ ততদিনে তাঁরা কুলীনত্ব প্রাপ্ত হয়েছেন। তাই মধ্যযুগে রচিত মঙ্গলকাব্যগুলোতে দেখা যাচ্ছে, তাতে গণেশ বন্দনা থাকছেই। ততদিনে গণেশ আমাদের ধর্মসংস্কৃতির মূলস্রোতে প্রবেশ করেছেন। বাংলায় গণেশ উপাসনা ও গাণপত্য সম্প্রদায়ের প্রভাব বৃদ্ধির পিছনে আরও একটা ঐতিহাসিক কারণ বাংলায় বর্গি আক্রমণ। যে মারাঠারা বাংলা আক্রমণ করেছিল, তারা ছিল শিব ও গণেশের পূজক। তারা সকলে তো বাংলা ছেড়ে চলে যাননি, থেকেও গেছেন কিছু মানুষ। যেমন ইটাচুনা রাজবাড়ির উত্তরাধিকারীরা নিজেদের আজ বর্গি বলে দাবি করেন। এরকম প্রভাবশালী মারাঠাদেরও সম্ভবত গণেশ পুজোর বিস্তারের পিছনে একটা যত সামান্যই হোক একটা ভূমিকা আছে। আজ পাড়ায় পাড়ায় গণেশ পুজোর ভিড় বেড়েছে বটে, কিন্তু আপনার বাড়ির লক্ষ্মী-সরস্বতী যে পুজোই হোক না কেন, গণেশ মন্ত্র শতবর্ষ ধরে সবার আগে উচ্চারিত হয়ে আসছে। কারণ গণেশ যে অর্বাচীনকালের দেবতা নন, হাজার হাজার বছর ধরে, আদিম কৃষিজীবী সমাজ থেকেই তিনি রয়েছেন। আজ তাঁর রূপ বদলেছে, পুরাণের গল্প প্রচারিত হয়েছে, জনপ্রিয় হয়েছে তাঁর কার্টুন। তবু আজও তিনি রয়ে গেছেন আমাদের আদরের-ভালোবাসার-শ্রদ্ধার দেবতা হিসেবে!


তথ্যসূত্র

  • Michael S. M. "The Origin of the Ganapati Cult." Asian Folklore Studies, vol. 42, 1983, pp. 91-116.

  • "Ganesha in Bengal." Research Guru: Online Journal of Multidisciplinary Subjects.

  • "Decoding Ganesha." The Hindu, 2017.

  • "Ganesh Chaturthi: The Origins of the Ganesha Festival." Peepul Tree.

  • Satbhai, Nilesh. "The Origin of Organ Transplants."

  • "Why Lord Ganesha and Ganesh Puja Are Gaining Popularity Among Bengali Society." Ananda Bazar Patrika.

  • The Mahabharata : a modern rendering : Ramesh Menon.

  • Critical Edition of Mahabharata: The Bhandarkar Oriental Research Institute’s critical edition

  • https://www.thestatesman.com/features/5-million-year-old-fossil-stegodon-elephant-discovered-shivalik-range-saharanpur-1502901847.html



পুরাণ ও ইতিহাসে গণেশ

Comments

Rated 0 out of 5 stars.
No ratings yet

Add a rating
bottom of page